গার্ল ইন স্কাউটিং বিভাগ, বাংলাদেশ স্কাউটস
স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৯০৭ সালে লন্ডনের ব্রাউনসী দ্বীপে পরীক্ষামূলক ভাবে স্কাউটিংয়ের শুভ সূচনা করেন যা জাতি, ধর্ম, বর্র্ন নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং বর্তমানে যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সমাদৃত।
অবিভক্ত ভারত থেকে বাংলাদেশ স্কাউটিং
অবিভক্ত ভারতে ১৯২০ সালে স্কাউট আন্দোলন প্রবর্তিত হয়। স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশে ইষ্টপাকিস্তান বয়স্কাউট এসোসিয়েশন নামে স্কাউটিং চালু ছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্ট অর্ডার নং- ১১১ এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গঠিত হয়। অতঃপর জাতীয় স্কাউট সংস্থায় বালক-বালিকা উভয়ের যোগদানের সুবির্ধার্থে বয়” শব্দটি বাদ দিয়ে ১৯৭৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর প্রকাশিত গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী “বাংলাদেশ বয়স্কাউট সমিতি”র পরিবর্তে সংস্থার নামকরণ-“বাংলাদেশ স্কাউটস” করা হয়। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বাংলাদেশ স্কাউটস এর স্বেচ্ছাসেবী ও প্রফেশনাল স্কাউট এক্সিকিউটিভগণ দেশের সকল জেলা ও থানা স্কাউটস এর সাংগঠনিক অবকাঠামোর আওতায় দেশের প্রত্যন্ত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউটিং প্রবর্তনের কাজে নিয়োজিত আছেন।
গার্ল গাইড এবং গার্ল ইন স্কাউটিং বিশ্ব প্রেক্ষিত ও বাংলাদেশ
মেয়েদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ব্যাডেন পাওয়েল ১৯১০ সালে গার্ল গাইড প্রবর্তন করলেও সময়ের পরিক্রমায় স্কাউটিংয়ের গতিশীল প্রোগ্রাম ও ট্রেনিংয়ে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি একটি বিশেষ দাবীতে রূপ নেয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩২ তম ওয়ার্ল্ড স্কাউট কনফারেন্সে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় কাউন্সিলের ২১তম সভায় বাংলাদেশ স্কাউটসের গঠন ও নিয়ম এর সংশোধনীর অনুমোদনের মাধ্যমে Girl in Scout আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শুরু হয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিলা ইউনিট লিডার তৈরি এবং তাদের মাধ্যমে ইউনিট পরিচালনার ব্যাপক কার্যক্রম।
বাংলাদেশে গার্ল গাইড সংস্থা World Association of Girl Guide and Girl Scout (WAGGGS) এর সদস্য। এই সংস্থাটিতে শুধুমাত্র মেয়েদের গার্ল গাইড এবং গার্ল স্কাউট হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্ত ছেলেদের সাথে একসাথে কাজ করার কোনো সুযোগ এই সংস্থা দিতে পারছে না। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ স্কাউটস World Organization of the Scout Movement (WOSM) এর সদস্য। WOSM এ বালক বালিকা বলে কোনো কথা নেই। বালক বালিকা উভয়ের জন্যই স্কাউট শব্দটি প্রযোজ্য।
১৯৯২ সালে WOSM এর মহাসচিব বাংলাদেশ স্কাউটসকে এক পত্রে উল্লেখ করেন “Scouts is, Under WOSM Constitution, an expression which comprises both girls and boys in Scouting”
বিশ্ব স্কাউট সংস্থার যেসব সদস্য দেশের সংস্থায় বালক বালিকা উভয় সদস্যইঅন্তর্ভূক্ত আছে সেখানে বালিকাদের চিহ্নিত করার জন্য গার্ল স্কাউট না বলে গার্ল-ইন-স্কাউট অর্থ্যাৎ “স্কাউটিং এর অন্তর্গত বালিকা” বুঝানোর জন্য এভাবে নামকরন করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হিসেবে দেখা যায় বিশ্বের বহু মুসলিম দেশসহ ৭৮টি দেশে গার্ল-ইন-স্কাউটিং প্রচলিত আছে।
বাংলাদেশ স্কাউটসে গার্ল-ইন-স্কাউটিং ২২ বছর সময় অতিক্রম করেছে। শুরু থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত বিভিন্ন পরিপত্র গার্ল-ইন-স্কাউটিং কার্যক্রমকে বেগবান করেছে। বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রোগ্রাম, প্রশিক্ষণ ও সংগঠন বিভাগ স্কাউটিংয়ে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি গতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংযোজন বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
শুরু থেকে অদ্যবধি স্কাউটিংয়ের সকল কার্যক্রমে মেয়েদের অংশগ্রহণ ও সুশৃঙ্খল সহাবস্থানের ফলে স্কাউটিংয়ে মেয়েরা নেতৃত্বের পর্যায়ে চলে এসেছে। এযাবৎ ৭ জন মহিলা জাতীয় কমিশনার ও ৯ জন জাতীয় উপ-কমিশনার গার্ল-ইন স্কাউটিং বিভাগকে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথম জাতীয় কমিশনার (গার্ল-ইন স্কাউটিং) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সুলতানা এস জামান থেকে বর্তমান জাতীয় কমিশনার (গার্ল-ইন স্কাউটিং) জনাব সুরাইয়া বেগম এনডিসি, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর নেতৃত্বে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্কাউট অঙ্গনে গার্ল ইন স্কাউটদের সাফল্য আজ ঈর্ষনীয়।
জাতীয় স্কাউট পরিসংখ্যান
সাল |
পুরুষ |
গার্ল ইন স্কাউট |
মোট |
মেয়েদের (%) |
১৯৯৭ |
১১০১৮৮৮ |
৭৬৩১২ |
১১৭৮২০০ |
৬.৪৭ |
২০১০ |
৯২৫৯৫৮ |
১৩০৪২৫ |
১০৫৬৩৮৩ |
১২.৩৪ |
২০১১ |
১০২১৭৫১ |
১৪১৭২২ |
১১৬৩৪৭৩ |
১২.১৮ |
২০১২ |
১০৫৭৬৩১ |
১৪৭৫০৫ |
১২০৫১৩৬ |
১২.২৩ |
২০১৩ |
১১২৮৪৬৬ |
১৫৭১৪১ |
১২৮৫৬০৭ |
১২.২২ |
২০১৪ |
১২০৬৯৪৪ |
১৬৫৮৩৯ |
১৩৭২৭৭৩ |
১২.০৮ |
২০১৫ |
১২৮৯৪৮৫ |
১৮৪৯৭৫ |
১৪৭৪৪৬০ |
১১.৫৩ |
জাতীয় ট্রেনিং টীমের সদস্য
ট্রেনিং টীম |
মোট |
পুরুষ |
মহিলা |
লিডার ট্রেনার |
২৪১ |
২২৮ |
১৩ |
সহকারী লিডার ট্রেনার |
৪০৪ |
৩৬৯ |
৩৫ |
গার্ল ইন স্কাউটদের অ্যওয়ার্ড প্রাপ্তি
শাপলা কাব অ্যওয়ার্ড |
. |
প্রেসিডেন্ট”স স্কাউট অ্যওয়ার্ড |
. |
প্রেসিডেন্ট”স রোভার স্কাউট অ্যওয়ার্ড |
. |
২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল গাজীপুরের মৌচাকের জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত নবম বাংলাদেশ ও প্রথম সার্ক ন্যাশনাল স্কাউট অর্গানাইজেশনস স্কাউট জাম্বুরীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কাউটিংয়ে মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ স্কাউটসের ৪৩তম জাতীয় কাউন্সিল সভায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি ও চীফ স্কাউট জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিক স্কাউট দল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।